রেলমন্ত্রী বলেন, ‘রেলের রানিং স্টাফদের যে অসুবিধা ছিল, তা নিয়ে আমি অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। সেখান থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, যে প্রজ্ঞাপনের কারণে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, সেটা আমরা বাতিল করে দেব।’
রেলওয়ের রানিং স্টাফ ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি মেনে নিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেন ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা।
এর আগে বুধবার ভোর ৬টা থেকে হঠাৎ ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেন রেলওয়ের কর্মীরা।
রেলওয়ের রানিং স্টাফ (চালক-গার্ড) ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বুধবার সকালে বলেছিলেন, ‘গত এপ্রিলে যে প্রজ্ঞাপন হয়েছে, তাতে আমাদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি ছিল। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাড়ানো হয়নি।
‘এর আগে আমাদের এই দাবিটি দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন সচিব মহোদয়। উনার কাছে আমরা লিখিত দাবি জানিয়েছিলাম।’
সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। এতে সারা দেশের ট্রেন যাত্রীরা পড়েন দুর্ভোগে।
রেলমন্ত্রীর ঘোষণা
রেলমন্ত্রী সাংবাদিক, রেলের রানিং স্টাফ ও শ্রমিকদের উপস্থিতিতে বলেন, ‘রেলের রানিং স্টাফদের যে অসুবিধা ছিল, তা নিয়ে আমি অর্থ মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করেছি। সেখান থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, যে প্রজ্ঞাপনের কারণে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, সেটা আমরা বাতিল করে দেব।
‘তার পরিপ্রেক্ষিতে আমি ঘোষণা দিচ্ছি যে, গত ১০ এপ্রিল যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, সেটি বাতিল করা হলো।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ১৯ এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সময় দিয়েছেন। আমার সচিবসহ আমি দেখা করব। আশা করছি আগামী ১৯ তারিখের মধ্যে বিষয়টির ফয়সালা আমরা পেয়ে যাব। আবার পেনশন-ভাতা যেভাবে রানিং স্ট্যাটাস ছিল, সেভাবেই পাবে বলে আশা করি।’
কর্মবিরতির জন্য কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে রেল বিভাগ ও মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল রেলের বিরুদ্ধে এখনও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।’
ওই সময় মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে রানিং স্টাফদের নেতারা।
রেলওয়ের রানিং স্টাফ (চালক-গার্ড) ও শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা রানিং স্টাফ কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নেতারা মন্ত্রী মহোদয় সঙ্গ বৈঠক করেছি। উনার আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছে এবং আমাদের আর অল্প সময় সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে।
‘নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, আমরা আজকের মতো এখান থেকে নিজ নিজ কাজে ফিরে যাব। এখন, এই মুহূর্ত থেকে আমরা কাজে ফিরে যাচ্ছি।’
ধর্মঘটের প্রেক্ষাপট
সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, রেলওয়ের একজন চালককে দিনে গড়ে ১৪ থেকে ১৮ ঘণ্টা ট্রেন চালাতে হয়। এ জন্য তাদের বাড়তি মজুরি ও পেনশনে ৭৫ শতাংশ টাকা দেয়া হয়।
বেতনের বাইরেও চালকরা যত মাইল দায়িত্ব পালন করেন এবং অতিরিক্ত সময় কাজ করেন, তার জন্য নির্দিষ্ট হারে ভাতা পেয়ে থাকেন তারা। এটা রেলে ‘মাইলেজ ভাতা’ হিসেবে পরিচিত।
সম্প্রতি রেলের অতিরিক্ত এ সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে ক্ষুব্ধ হন ট্রেনের চালকরা। এর আগে আট ঘণ্টার বেশি কাজ না করার ঘোষণাও দেন তারা। এ কারণে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কাও দেখা দেয়।
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, সার্বক্ষণিক হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্রিটিশ আমল থেকে চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালন করা চালক, গার্ড ও টিকিট চেকারদের বিশেষ আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়। অতিরিক্ত সময়ে প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে দেয়া হয় মূল বেতনের একদিনের সমপরিমাণ টাকা। পেনশনের সঙ্গে দেয়া হয় বাড়তি ৭৫ শতাংশ টাকা।
এসব চালক ও গার্ডদের বেতন-ভাতা দেয়া হতো রেলওয়ের স্বতন্ত্র কাঠামোয়, কিন্তু গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সফটওয়্যার ‘আইবাস প্লাস প্লাস’-এর মাধ্যমে রেলের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়ার উদ্যোগ নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের (রানিং স্টাফ) আগের সেই ‘মাইলেজ’ সুবিধা বাতিল হয়ে যায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্ত জানার পর মাইলেজ সুবিধা চালুর দাবিতে নিয়মিত বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা করেন চালক, গার্ড (ট্রেন পরিচালক) ও টিকিট চেকাররা। তারা রেলমন্ত্রী, রেলওয়ের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়ার পাশাপাশি একাধিক সভাও করেন।
গত ১০ এপ্রিল সিনিয়র সহকারী সচিব শামীম বানু শান্তি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, বেসমারিক কর্মচারীদের পেনশন ও আনুতোষিক হিসাবের ক্ষেত্রে মূল বেতনের সঙ্গে কোনো ভাতা যোগ করার সুযোগ নেই বিধায় রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মূল বেতনের সঙ্গে ‘রানিং ভাতা’ পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা প্রদানের প্রস্তাবে নির্দেশক্রমে পুনরায় অর্থ বিভাগের অসম্মতি জ্ঞাপন করা হলো।”
এমন ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন রেলের রানিং স্টাফরা। এর প্রতিবাদে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বুধবার সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেন তারা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।